Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মুরগির খামারে ইঁদুরের সমস্যা ও ব্যবস্থাপনা

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করার জন্য বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে মুরগির (poultry) উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মুরগির কম মূল্য ও আয় বৃদ্ধির কারণে জনপ্রতি মুরগির মাংস গ্রহণের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে নিম্ন মধ্যম আয়ের কৃষক মুরগির খামারকে বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং এ শিল্প আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে গড়ে উঠছে। প্রতি বছর ২-৩ শতাংশ হারে এ শিল্পের প্রসার ঘটছে এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি বাড়তে। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ডিম উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৬৫.৫ মিলিয়ন টন এবং এশিয়ার ডিম উৎপাদনের পরিমাণ ৩৮.৩ মিলিয়ন টন (৫৮.৫%) ২০১২-১৩ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর এর ৫১৩৪ মিলিয়ন ডিম উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে পোলট্রি শিল্প জিডিপিতে ১ শতাংশ এবং প্রায় ৬০ লাখ লোক এ শিল্পের সাথে জড়িত। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১,১৫,০০০ হাজার মুরগির খামার ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে এর পরিমাণ মাত্র ৬৬,০০০ (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৩)। ৫৫,০০০ মুরগির খামার বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবে কারণে কমে গেছে। (ডেইলি স্টার ২০১৩)। এত বড় পোলট্রি শিল্পের মুরগির জন্য নিবিড় পরিচর্যা করা প্রয়োজন যাতে ডিম ও মাংসের উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। মুরগির খামারের আশপাশে ময়লা আবর্জনা, বিষ্টা, মৃত মুরগি এসব থাকে যা ইঁদুর ও অন্যান্য পোকা মাকড়ের প্রধান আবাসস্থল।
পরজীবী ও মাটি উপরে অবস্থানকারী উভয় ধরনের বালাই পোলট্রি পরিবেশে দেখা যায়। বহিঃপরজীবী জীব হলো মাইট, লাইস, ফ্লি ও টিকস এবং বহিভাগে অবস্থানকারী জীব হলো বিটল, ফ্লাইস, মথ, তেলেপোকাও ইঁদুর। মুরগির খামারের কাচা ভিটি, নোংরা পরিবেশ, নিকটস্থ ফসলের মাঠ ইত্যাদির কারণে এ সব জীব মুরগীর খামারের স্থানান্তরিত হয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতি করে থাকে। এসব বালাইয়ের মধ্যে ইঁদুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। ইঁদুর গর্ত তৈরি ও কাটাকুটি স্বভাবের মাধ্যমে মুরগির খামারের কাঠামো ক্ষতি করে। এরা ডিম, মুরগির বাচ্চা ও মুরগির খাবার খেয়ে ক্ষতি করে, তাছাড়া ইঁদুরের মলমূত্র ও পশম মুরগির খাবারের সাথে মিশে পরোক্ষভাবে ক্ষতি করে। তদুপরি মুরগি ও মুরগির বাচ্চা এবং খামারের কর্মীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগ বিস্তার করে।
মুরগির খামারে ইঁদুরের প্রজাতি
সারাবিশ্বে ইঁদুর মুরগির খামারে মারাত্মক ক্ষতি করে, মুরগির খামারে ইঁদুর দমন করতে প্রথমে কি কি প্রজাতির ইঁদুর আছে তাদের জীবন বৃত্তান্ত জানা জরুরি। কার্যকরী দমন ব্যবস্থা গ্রহণ বা পরিকল্পনা করা যায় যদি ইঁদুরের প্রজাতি সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়। মুরগির খামার তিন প্রজাতির ইঁদুর বেশি ক্ষতি করে থাকে। এরা হলো মাঠের কালো ইঁদুর,  গেছো ইঁদুর ও নেংটি ইঁদুর।
ছোট ব্যান্ডিকুট ইঁদুর/ছোট কালো ইঁদুর
ছোট ব্যান্ডিকুট/কালো ইঁদুর ফসলের ক্ষেত থেকে শুরু শহরের সব এলাকায় এদের দেখা যায়। এরা মোটাসোটা আকারের ইঁদুর। এদের শরীরের ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম এদের মাথা গোলকার ও চওড়া। লেজ, মাথা ও শরীরের তুলনায় ছোট এবং পৃষ্ঠ দেশের রঙ বাদামি ও মোটা পশমযুক্ত। এদের বিভিন্ন পরিবেশ দেখা যায়। ব্যান্ডিকুট নিশাচর এবং গর্ত খননে পটু। এরা তাদের নিজস¦ তৈরি গর্তে বাস করে এবং মুরগির খামারে  প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি করে।
গেছো ইঁদুর : গেছো ইঁদুর ছোট আকারের ইঁদুর
এদের ওজন ৮০-১২০ গ্রাম। এদের লেজ দুই রঙওয়ালা, পেচানো, লম্বা এবং মাথা ও শরীরের তুলনায় অনেক বড় । এরা সাধারণত বসতবাড়ির ওপরের অংশে বাস করে অনেক সময় পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপেও এরা বাস করে। এদের কালো ইঁদুর, ঘরের ইঁদুর বা জাহাজের ইঁদুরও বলা হয়। এরা নিশাচর প্রাণী। বেশির ভাগ সময় এদের রাতে চলাচল করতে দেখা যায় এবং এদের চলাচল ৩০ মিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে।
ঘরের নেংটি ইঁদুর : নেংটি ইঁদুর ছোট আকারের ইঁদুর। এদের ওজন প্রায় ১৫ গ্রাম, নাক কিছুটা সরু, লেজ পশমহীন কিন্তু বৃত্তাকার আঁশযুক্ত। লেজ তিন রঙের মিশ্রণ মাথা ও শরীরের তুলনায় লেজ বড়। নেংটি ইঁদুর দালান কোটা ও বাসাবাড়িতে দেখা যায়। এরা দেয়ালে, কুঠরি পুরাতন আসবাবপত্র ও গুদামে বাসা তৈরি করে। এরা মুরগির খামারে খাবার খেয়ে, ডিম নষ্ট করে এবং বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। এরা ৩ থেকে ১০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চলাচল করে থাকে।        
মুরগির খামারের ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতি
ক. মুরগির খাবারের ক্ষতি

ইঁদুর মুরগির  খাবার খায় এবং খাবার নষ্ট করে এবং যে পরিমাণ খায় তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে থাকে। ইঁদুর তার শরীরের ওজনের তুলনায় ১০ শতাংশ খাবার খায় এবং প্রতিদিন ২৫ গ্রাম এবং বছরের ৯.১ কেজি খাবার খায়, গড়ে প্রতি দিন একটি মুরগির খামারে ৮.৬ গ্রাম মুরগি খাবার খেয়ে থাকে। বিভিন্ন  পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে যে, মুরগির খামারে প্রতি দিন প্রায় ২-৫০ কেজি খাবার খেয়ে এবং খাবারে ব্যাগ কেটে নষ্ট করে থাকে। ইঁদুরের মলমূত্র ও পশমের মাধ্যমে মুরগির খাবার  দূষিত করে এবং এর পরিমাণ প্রায় ০.৪- ৩.৩%। ইঁদুর দ্বারা মুরগির খাবার নষ্ট একটি অর্থনৈতিক ক্ষতি যার পরিমাণ চলমান খরচের প্রায় ৫০-৭৫%।
খ. মুরগির ডিমের ক্ষতি
বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, ইঁদুর দ্বারা ডিমের ক্ষতির পরিমাণ ০৫% এবং তা ১০% পর্যন্ত হতে পারে যদি সংরক্ষণের অবস্থা দুর্বল থাকে। ডিমের  প্লাস্টিক ট্রে ও ইঁদুর কেটে নষ্ট করে। ইঁদুর প্রায়ই ৩০ দিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে আক্রমণ করে এবং প্রায় একটি খামারে ৫.৯% বাচ্চাকে মেরে ফেলে। ইঁদুর প্রায়ই মুরগিকে ভয় দেখায় ও কামড় দিয়ে থাকে এবং মুরগির ডিম পাড়া, বৃদ্ধি ও খাদ্য গ্রহণে প্রভাব ফেলে থাকে। বাংলাদেশে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া, শ্রীপুর ও কালীগঞ্জ এলাকায় জরিপে দেখা গেছে যে, প্রতি মুরগির খামারে মাসে প্রায় ২৫০ টাকার ডিম নষ্ট করে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রতিটি মুরগীর খামারে প্রায় ১৮,০০০ টাকার ক্ষতি করে থাকে।
গ. অবকাঠামোর ক্ষতি
খামারের ঘর ও যন্ত্রপাতির নষ্ট করার মাধ্যমে বাস্তবিক পক্ষে ক্ষতি অনেক ব্যয়বহুল। ইঁদুরের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সবসময় কাটাকুটি করা। ইঁদুরের ওপরের অংশের ছেদন দন্ত প্রতি দিন প্রায় ০.৪ মিমি. হারে বৃদ্ধি পায়। এই দাঁতের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য ইঁদুর প্রতিদিন কিছু না কিছু কেটে থাকে, এর ফল হিসেবে খাদ্য ছাড়া অন্য দ্রব্যাদিও কেটে থাকে। ইঁদুরের কাটাকুটি  স্বভাবের জন্য মুরগির ঘর ও দেয়াল দুর্বল হতে পারে। তারা খাবারের পাত্র, পানির পাত্র কেটে নষ্ট করে। মুরগির খামারের মেঝেতে প্রচুর গর্ত তৈরি করে যা বর্ষাকালে ঘরে পানি ঢুকে এবং অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পরে। ইউএসএইডের হিসাব মতে, প্রতি বছর ইঁদুর দ্বারা নষ্ট খাবার ঘর ও যন্ত্রপাতির ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ ইউএস ডলার (দুই হাজার টাকা)। ইঁদুর বৈদ্যুতিক ইনসুলেটর ও তার কেটে শর্টসার্কিট সৃষ্টির মাধ্যমে খামারের ক্ষতি করে থাকে।             
ঘ. বিভিন্ন রোগের বাহক ও সংরক্ষক
ইঁদুর বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বাহক ও সংরক্ষক হিসাবে কাজ করে । ইঁদুর প্রাথমিকভাবে মলমূত্র ও পশমের মাধ্যমে মুরগির খাবার সংক্রমিত হয়। ইঁদুর প্রায় ৬০ ধরনের বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে থাকে যা দ্বারা মুরগির ও খামার কর্মী আক্রান্ত হয়ে থাকে। ইঁদুর বিভিন্ন মুরগির রোগ যেমন- সালমোনেলোসিস, কলিব্যক্সিলোসিস, মাইকোপ্লাজমেসিস ইত্যাদি, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত রোগগুলো হলো লেপটোসপাইরোস, টিউবারকোলোসিস, ফাউল কলেরা, ফাউল টাইফয়েড, এভিয়ান প্যারাটাইফয়েড, ভাইরাল ডিজিজ, ক্যাটল ডিজিজ, এবং প্রটোজোয়ান  সংক্রমণ যেমন টক্সোপ্লাজমোসিস, কক্সিডোসিস এসব রোগ ছড়িয়ে থাকে। সবগুলো রোগ মুরগির ডিম, মাংস উৎপাদনের মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে এ রোগ গুলোর মধ্যে সালমোনেলা ও ফাউল কলেরা মুরগির খামার উৎপাদনকারীদের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। ইঁদুর বিভিন্ন পরজীবী যেমনÑ লাইস, ফ্লি এবং মাইটসের আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে থাকে। সালমোনেলা এমন একটি  ক্ষতিকর রোগ যা মুরগির এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে স্থানান্তর হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার রোগের আক্রমণের ফলে প্রায়ই মুরগি মারা যায়। মুরগির খাবারে খাওয়ার ক্ষমতা কমে যায় এবং বাজারে আক্রান্ত মুরগির বাজার মূল্য কমে যায়। কাজেই ইঁদুর দ্বারা খাবার সংক্রমণ হওয়া কমানো এবং ইঁদুরের সংখ্য কমানোই হল মুরগির খামারির প্রধান কৌশল।
ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা
নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পনার মধ্যে মুরগির খামারের অবস্থা পরিদর্শন এবং  ইঁদুরের উপদ্রব বা উপস্থিতির পরিমাণ নির্ধারণ।
মুরগির খামারের অবস্থা পরিদর্শন
প্রথম  ধাপ হলো প্রত্যক্ষভাবে খামারের অবস্থা পরিদর্শন করা। এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হলো এখানে কোনো ইঁদুরের উৎপাত আছে কিনা যার মাধ্যমে ইঁদুরের নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে ক্ষতি করতে পারে। ইঁদুর  প্রত্যক্ষকরণ, ইঁদুরের মল, পায়ের চিহ্ন, গর্ত, চলাচলের রাস্তা, নতুন কাটাকুটির চিহ্ন এবং মৃত ইঁদুর লক্ষ্য করা ইত্যাদি তথ্যের মাধ্যমে ইঁদুরের উপস্থিতি বুঝা যায়। পরিদর্শনের মধ্যে ময়লার স্তূপ, ড্রেন, চ্যানেল, পাইপ, গর্ত, বৈদ্যুতিক বা টেলিফোনের তার দরজার মধ্যে ফাঁকা স্থান, পানির পাইপ ইত্যাদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ইঁদুরের উপস্থিতি বা ক্ষতির মাত্রা বিভিন্ন পদ্ধতিতে যাচাই করা যায় যেমন-
১. প্রত্যক্ষ দর্শন
২. ট্রেপিং ইনডেক্স
৩. ইঁদুরের পায়ের চিহ্ন
৪. সতেজ গর্ত পর্যবেক্ষণ
ইঁদুর দমন
মুরগির খামারিরা ইঁদুরের আক্রমণ বা উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন নয় এবং পোলট্রি ও জনগণের স্বাস্থ্য বিষয় কমই নজর দিয়ে থাকে। কার্যকরী ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে পরিদর্শন, প্রতিবন্ধকতা এবং  ইঁদুর দমন ব্যবস্থার ওপর।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
ইঁদুর পরিষ্কার পরিবেশ পছন্দ করে না । খামারের যন্ত্রপাতি পরিষ্কার রাখা, আগাছা, আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করে ইঁদুরের উপদ্রব কমানো যায়। খামারের আশপাশে গাছ ও গাছের ডালপালা কেটে পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে ইঁদুর বাসা তৈরি করতে না পারে।
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা
সমতল টিনের শিট ব্যবহার করে লম্বালম্বিভাবে ইঁদুরের চলাচল বন্ধ করা যায়। খামারে মেঝে ইটের কনক্রিট দিয়ে তৈরি করতে হবে দেয়াল এবং দরজার বড় ছিদ্র ও ফাঁকা বন্ধ করতে হবে। খামারের বাহিরের অংশ ঢালু রাখতে হবে যাতে ইঁদুর উঠতে না পারে।
ইঁদুরের প্রতিবন্ধকতা সব সময় কার্যকর নয় তখন দমন ব্যবস্থাপনা অন্যান্য পদ্ধতি  বিবেচনায় আনতে হবে যেমন ফাঁদ ও রাসায়নিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। মুরগির খামারে জৈবিক পদ্ধতি বা আলট্রাসনিক সাউন্ড পদ্ধতি খুব একটা কার্যকরী হবে না।
ফাঁদ (Trapping)
ফাঁদ হল একটি দ্রুত কার্যকরী এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, মুরগির খামারে ইঁদুর ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো, গ্লু-ট্র্যাপ, মরণফাঁদ, জীবন্তফাঁদ এসব। সট্র্যাপ, গ্লু-বোর্ড সাধারণ কাডবোর্ড শিট বা প্লাস্টিক শিটের হয়ে থাকে যেখানে উচ্চ মাত্রার আঠা ব্যবহার করা হয় সেখানে ইঁদুর আটকে থাকে। গ্লু-বোর্ড নেংটি ইঁদুরের জন্য বেশি কার্যকর। ভিজা এবং ময়লা আবর্জনাযুক্ত জায়গায় গ্লু-বোর্ড দেয়া যাবে না।
মরণফাঁদ (Kill/snap trap)
এ ধরনের ফাঁদ কাঠের ও ধাতব পাতের হয়ে থাকে এ ফাঁদ সাধারণ, কম খরচ এবং কার্যকরী হয়ে থাকে যদি ভালোভাবে পাতা হয়। এ ধরনের ফাঁদ লেয়ার হাউসে ব্যবহার করা উচিত সেখানে মুরগির খাচার ভেতর নিরাপদে থাকে। ফাঁদ সাধারণত ইঁদুরের চলাচলের পথে এবং দেয়াল ঘেসে পাততে হবে কারণ ইঁদুর দেয়াল ঘেসে চলাচল করে। টোপ হিসেবে শুঁটকি মাছ, আলু, নারিকেল, পাউরুটি এসব ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।  
জীবন্তফাঁদ  (Live trap)
জীবন্ত ইঁদুর ধরার জন্য এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। জীবন্ত ফাঁদের ইঁদুর ধরে এদের না মেরে  ছেড়ে দেয়া যাবে না কারণ ছেড়ে দিলে ইঁদুরের হোম রেঞ্জের মধ্যে আবার খামারে চলে আসবে। এ জন্য জীবন্তফাঁদ কয়েক মিনিট পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ইঁদুর মারা যাবে। জীবন্তফাঁদ ও ইঁদুরের চলাচলের রাস্তায় ও দেয়াল ঘেসে স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া বাঁশের ফাঁদ, টিনের ফাঁদ নামে স্থানীয়ভাবে পাওয়া যাবে। ফাঁদ ব্যবহারে পরিবেশের কোনো  ক্ষতি করে না এবং পরিবেশ দূষণ করে না।     
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন  
রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন হল সারাবিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। বড় খামারে এবং বাণিজ্যিকভাবে ইঁদুর দমনের  জন্য রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সারাবিশ্বে অনেক ইঁদুরনাশকের বিভিন্ন ফরমুলেশনের  পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ব্যবহার করা হচ্ছে। যখন ইঁদুরের সংখ্যা বেশি থাকে তখন বিষটোপ দিয়ে ইঁদুর দমন সবচেয়ে ভালো উপায়। ইঁদুর দমনের জন্য সাধারণত দুই ধরনের ইঁদুরনাশক ব্যবহার করা হয়।
১. তাৎক্ষণিক বা তীব্র ইঁদুরনাশক (Acute rodenticide) যেমন- অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড, জিংক ফসফাইড ইত্যাদি।
২. দীর্ঘমেয়াদি ইঁদুরনাশক (Chronic rodenticide) যেমন- ওয়ারফারিন, ব্রোমাডিয়োলন ইত্যাদি।
দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপের মধ্যে একক মাত্রার বিষটোপ (ব্রোমাডিওলন, ব্রডিফেকাম এবং ফ্লোকোমাফিন) বহুমাত্রার বিষটোপ হতে বেশি কার্যকর এবং পৃথিবীব্যাপী বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ক. তীব্র/তাৎক্ষণিক ইঁদুরনাশক : তাৎক্ষণিক ইঁদুরনাশক দ্রুত কার্যকর এবং সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইঁদুর মারা যায়। দুটি অজৈব রাসায়নিক দ্রব্য এই ইঁদুরনাশকের অন্তর্ভুক্ত। তারা হলো বেরিনাম কার্বোনেট এবং জিঙ্ক ফসফাইড। তাদের মধ্যে ফসফাইড বেশি ব্যবহৃত হয়।
জিঙ্ক ফসফাইড : জিঙ্ক ফসফাইড ধূসর কাল রঙের। রসুনের মতো গন্ধ, পাউডার আকৃতি, সরাসরি জিঙ্ক ও ফসফাইড সমন¦য়ে গঠিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত তীব্র ইঁদুরনাশক। এটি পানি এবং অ্যালকোহলে অদ্রবণীয়। শুষ্ক অবস্থায় অপরিবর্তনীয়। আর্দ্র আবহাওয়ায় আস্তে আস্তে কার্যকরিতা কমে যায়। এ বিষ এসিড মাধ্যমে দ্রুত কার্যকরী হয়ে প্রাণঘাতী ফসফিন গ্যাসে পরিবর্তিত হয় যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্য খুবই বিষাক্ত। বিষটোপ সাবধানে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে যেন মুরগি খেতে না পারে।
খ. দীর্ঘস্থায়ী ইঁদুরনাশক (Anticoagulants)
আস্তে আস্তে কার্যকরী সব ইঁদুরনাশক দীর্ঘমেয়াদি বিষের অন্তর্ভুক্ত। যা প্রাথমিকভাবে রক্ত জমাট বাধতে বাধা সৃষ্টি করে। এর সুবিধা হল এ যে এ বিষ প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনকারী প্রজাতির উপর ভালোভাবে কাজ করে মেরে ফেলে এবং পরিমাণ ও কম লাগে।
সারাবিশ্বে পোলট্রি শিল্প ইঁদুর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে এবং পোলট্রি উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। পোলট্রি শিল্পে ইঁদুর দ্বারা অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে লক্ষ্য রেখে মুরগির খামারিদের  মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যাতে সমন্বিতভাবে ইঁদুর দমন করে এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন প্রতিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করার পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং বিভিন্ন ফাঁদ ও ইঁদুরনাশক প্রয়োগ করে ইঁদুর দমন করা। বিভিন্ন পদ্ধতির সমন্বয় করে সম্মিলিত উপায়ে ইঁদুর দমন করলেই মুরগির খামারে ইঁদুরের উপদ্রব কমানো সম্ভব।

ড. মো. শাহ আলম* ড. গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস**
*ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা **প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, অনিষ্টকারী মেরুদ-ী প্রাণী বিভাগ, বিএআরআই, গাজীপুর


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon